জার্নাল কথনঃ কোথায় সাবমিট করব, কোথায় করব না?
- প্রয়াস জামান
- Nov 16, 2019
- 4 min read
এই পোস্টটা আমার মত একা একা, শূন্য থেকে শুরু করা মানুষদের জন্য। আমি একা পথ চলতে গিয়ে যেসব জায়গায় সোজা বাংলায় "ধরা খেয়েছি" সেসব প্রশ্নোত্তরে সাজানোর চেষ্টা করেছি। লোকে বলে "বুদ্ধিমানে শেখে অন্যের ভুল থেকে"। আমি আপনাদের সে সুযোগটা করে দিতেই লিখছি। প্রিডেটরি, পে এন্ড পাবলিশ, নন পীয়ার রিভিউড, অমুক দেশী তমুক দেশী জার্নালের উত্থান ও আধিক্যের যুগে একজন সুপারভাইজরবিহীন, অভিজ্ঞতাহীন এবং অধৈর্য্য ছাত্রের জন্য ভালো জার্নাল চেনা খুব একটা সহজ কাজ নয়। অধৈর্য্য একারণেই লিখলাম কারণ আমি শুরুতে অনেককেই দ্রুত ফলাফল আশা করতে দেখি, যেটা আসলে গবেষণার ক্ষেত্রে একেবারেই খাটে না।
:::::::::: প্রশ্নঃ কিভাবে ভালো জার্নাল চিনবেন?
উত্তরঃ
সবচেয়ে কার্যকরী উপায়টি হলো প্রথমেই যেকোন জার্নালের "ইন্ডেক্সিং" (Indexing) বা "ইন্ডেক্সড ইন" (Indexed in) সেকশনে যাবেন, ওখানে যদি ইন্ডেক্সড ইন "স্কোপাস (SCOPUS), এসসিআই (SCI) , ক্ল্যারিভেইট (CLARIVATE), পাবমেড (PUBMED) বা থমসন রাউটার (THOMSON REUTER)" এবং SCImago এই পাঁচটার অন্তত দুইটি দেখতে পান তাহলে মোটামুটি বলা যায় যে এটি একটা ভালো জার্নাল। আরো ভালোভাবে বললে এদের গ্রহণযোগ্যতা বিজ্ঞানমহলে (Scientific society) অনেক অনেক বেশি।
:::::::::: প্রশ্নঃ যেগুলা বললেন এগুলার একটাও তো পেলাম না? এবার?
উত্তরঃ
জার্নালটা অন্তত ওপেন এক্সেস ডিরেক্টরিতে(DOAJ- ডোয়াজ) বা গুগল স্কলারে (GOOGLE SCHOLAR) ইন্ডেক্সড আছে কিনা চেক করুন। বর্তমানে DOAJ কে বেশ ভালো একটা মানদন্ড হিসেবে দেখা হয়। রিসার্চগেটকেও (Researchgate) একটা স্কেল হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। বিভিন্ন দেশের জার্নাল যারা উপরের উল্লেখিত ইন্ডেক্সিং এ পড়ে না বা আওতাভুক্ত না তাদের অনেকগুলোই রিসার্চগেটে ইন্ডেক্সড। তবে এদের মানের ব্যাপারে সবার মনে খচখচ থাকেই।
তবে বলে রাখা ভালো দুনিয়ার একেবারে সব জার্নাল এদের ইন্ডেক্সড হবে এমনটা নয়। অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল আছে এমন, যারা গবেষণাপত্রের রিভিউ নিয়ে অনেক কড়াকড়ি করে। এরপর এইসব জার্নালের পেপার পাবলিশ হতে অনেক সময় লাগে। জার্নালের আর্কাইভ বা ভলিউম সেকশন গুলোতে যান, কয়টা ভলিউম, কয়টা ইস্যু, প্রতি ইস্যুতে কয়টা পেপার দেখুন। যদি দেখেন যে কমপক্ষে ১০-২০ টি ভলিউম আছে এবং রিসেন্ট পেপার কয়দিন আগের? যদি দেখেন যে মোটামুটি কাছাকাছি সময়ের পেপার (বর্তমান সময়কার), তাহলে বাতিলের খাতায় ফেলে দেবেন না জার্নালটাকে। পেপারগুলোর এক্সেপ্টেন্স ডেইট, সাবমিট ডেট কবে কখন মনোযোগদিয়ে দেখুন, মোটামুটি লম্বা সময় কি না দেখুন। ::::::::::
প্রশ্নঃ যেগুলা বললেন ওইগুলা তো একটাও মিললো না। দশ পনেরো দিনেই পেপার পাবলিশড, ভলিউম কম, সব দেখি ভারতীয়, আফ্রিকান, মালয়েশিয়ান অথরদের মেলা। ট্যাকা পয়সা চাইতেছে।
উত্তরঃ তাহলে সম্ভবত জার্নালটি ভালো জার্নাল নয়। ব্যাপারটা এমন না যে ভারতীয়রা বা আফ্রিকানরা গবেষনায় ভালো নয়। ব্যাপারটা হলো হয়তো এইসব জার্নালের পেপারগুলো অতটা মানসপন্ন নয়, হতে পারে চৌর্যবৃত্তিতে পরিপূর্ণ (মানে কপি পেস্ট) ভুল মেথডের গবেষণা। ঠিকঠাক না দেখেই ছাপা হয়ে গেছে মানে পীয়ার রিভিউ হয়নি (মানে পেপারের মানের বা বিষয়বস্তুর উপর বিশেষজ্ঞ মতামত) । বিভিন্ন স্কলারশীপ এবং নানা রকম সুবিধা পাওয়ার জন্য অনেক দেশেই বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এখন এই ধরনের জার্নালে পাবলিকেশন করার একটা প্রবণতা আছে।
এগুলোকে প্রিডেটরি জার্নাল ( Predatory Journals) বলা হয়ে থাকে এবং এদেরকে চেনার একটা সহজ উপায় হলো
১। এরা পাব্লিকেশনের জন্য অবশ্যই টাকা চাইবেই।
২। আপনি টাকা দিতে না চাইলে দর কষাকষি করবে, অথবা আপনাকে ছাড় দেবে।
৩। কোন রিভিউ রিপোর্ট দেবে না।
৪। আপনি টাকা দিতে না পারলে আপনি একদিন হঠাৎ দেখবেন আপনাকে বলা ছাড়াই পেপার পাবলিশ করে দিতে পারে।
একটা ওয়েবসাইটই আছে যেটাতে আপনি যে জার্নালটিতে সাবমিট করতে চাচ্ছেন সেটা প্রিডেটরি কিনা সেটা চেক করতে পারবেন। লিস্টে যদি আপনার জার্নাল থাকে তাহলে অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।
লিংকটী হলোঃ https://beallslist.weebly.com/
এই সমস্ত জার্নালে পাবলিশ হওয়া পেপারের তেমন কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই, তবে এইসব পেপারের মধ্যেও যে ভালো গবেষণা নেই সেটা আপনি বলতে পারবেন না নিশ্চিত ভাবে।
::::::::::
প্রশ্নঃ কেন খারাপ বলা যাবে না?
উত্তরঃ গবেষণাপত্রের মান নির্ভর করে অনেকটাই গবেষকের উপর। আমি একজন অক্সফোর্ডের প্রফেসরকে (Professor Marry J thrornbush) দেখেছি উনি এইরকম একটা জার্নালে পেপার ছাপিয়েছেন। উনাকে মেইল করার পর উনি বলেছিলেন, কোন ছাত্রের পেপার পড়ার আগে উনি ছাত্রের সুপারভাইজর বা কাজটার ধরণ সম্পর্কে খেয়াল করেন। আমাদের একজন শিক্ষক বলেছিলেন যে গবেষণাটা শুরু করাটাও জরুরী। কোথায় পাবলিশ হলো সেটা একটা বিশাল ফ্যাক্টর বটে , কিন্তু কাজটা যদি ভ্যালিড হয় তাহলে সেটা একসময় না একসময় কাজে লাগবেই।
:::::::::: প্রশ্নঃ আচ্ছা বুঝলাম, তাহলে কমন যেসব ইন্ডেক্সড পাবলিশার্স আছে তাদের তো অনেক জার্নাল, এদের মধ্যে কোনটায় আমারটা দিলে বেটার হবে কিভাবে জানবো?
উত্তরঃ দয়া করে জার্নাল অব অমুক লিখে গুগলে সার্চ দিবেন না। প্রিডেটরি বা পেইড জার্নালগুলো নিজেদের জার্নালকে এত বেশি অপটিমাইজ করে রাখে যে গুগল সার্চের শুরুতে পাঁচ সাতটা ওইসব জার্নালেরই হোমপেজ হাজির হবে। স্প্রিঞ্জার, এলসভিয়ার, আইট্রিপলি ইত্যাদি বড় পাবলিশিং হাউজের সরাসরি জার্নাল সাজেস্টার আছে। আপনি এলসভিয়ার/স্প্রিঞ্জার/ আইট্রিপলী জার্নাল সাজেস্টার (Journal Suggester) লিখে সার্চ করুন। লিংকে ঢুকুন, পেপারের নাম, অ্যাবস্ট্রাক্ট দিন, আপনি যে ফিল্ডে কাজ করেছেন সেটা ডিফাইন করুন। জার্নাল সাজেস্টার বাটনে ক্লিক করলেই আপনার পেপার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ জার্নালের লিস্ট পেয়ে যাবেন, এরপর আপনার মর্জি। এছাড়াও non-scopus , ডোয়াজের (DOAJ) ও বিষয়ভিত্তিক জার্নাল খোঁজার অপশন আছে। ওদের সাইটে পাবেন।
"কোন জার্নালে পেপার দেব" এই বিষয়ের উপর আমাদের একটা বিস্তারিত পোস্ট আছে সেটা পড়তে পারেন।লিংকঃ
https://bit.ly/2Qq43aB
:::::::::: প্রশ্নঃ কোন জার্নাল স্কোপাসে/থমসনে আছে কিনা কিভাবে জানবো? কোন জার্নাল যদি মিথ্যেভাবে লিখে যে তাদের জার্নাল স্কোপাসে আছে সেটা যাচাই করব কিভাবে?
উত্তরঃ স্কোপাস ইন্ডেক্সড জার্নালস (Scoupus indexed Journal) লিখে গুগলে সার্চ দিন, লিংক পেয়ে যাবেন, লিংকে গিয়ে আপনার জার্নালটার নাম/ ISBN লিখে সার্চ দেন। যদি পাওয়া না যায় তাহলে বুঝবেন জার্নালটায় মিথ্যে তথ্য আছে। অথবা তাদের সদস্যপদ স্কোপাস থেকে বাতিল হয়ে গেছে।
:::::::::: প্রশ্নঃ বাংলাদেশী কনফারেন্স পেপার নিয়ে কিছু?
উত্তরঃ
Most of The conference papers in Bangladesh are usually goes on without indexing. আইট্রিপলি এক্সপ্লোর ইন্ডেক্সড যেসব কনফারেন্স হয় সেগুলোতে পেপার দেয়া সবচেয়ে ভালো। কেন ভালো সেটা আপনি নিজে যখন করবেন তখনই তফাৎ টের পাবেন। তবে অনেক এমন শিক্ষার্থী আছেন যারা সৎভাবে বিভিন্ন কনফারেন্সের পেপারের কাজটা করেন (ইন্ডেক্সডবিহিন কনফারেন্স হলেও), এবং তাদের শিক্ষকরাও এতে তাদের সাহায্য করেন।আইট্রিপলি বাদেও বাংলাদেশে বর্তমানে স্প্রিঞ্জার বা এলসভিয়ারের ইন্ডেক্সড বা ফ্ল্যাগশিপযুক্ত কনফারেন্স হয়। এগুলোতে অ্যাকসেপ্ট হওয়া পেপারের বেশ ভালোই গ্রহণযোগ্যতা আছে।
বাংলাদেশে কোন ভ্যালিড ইন্ডেক্সিং বা ফ্ল্যাগশিপ আনার ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি অর্থ গুনতে হয় মাঝেমাঝে এজন্য অনেকেই ফ্ল্যাগশিপ আনেন না। ব্যাপারটা অর্গানাইজাররা মেইনলি ডীল করেন।
:::::::::: প্রশ্নঃ বিদেশের কনফারেন্সের ক্ষেত্রে? উত্তরঃ একই কথা , ভালো ইন্ডেক্সিং আছে কিনা দেখুন। সাধারণ বাংলাদেশী টাকায় অনেক টাকা লাগে অংশগ্রণে। এত টাকা খরচ করবেন, প্রশ্ন উঠতে পারে এমন কিছু কেন করবেন?
Comments